মোহাম্মদ সেলিম ও তোফাজ্জ্বল :
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নে খাসকান্দিতে সহিংস ঘটনায় বর্তমানে এলাকাটি পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। সেখানে নারী ও শিশু ছাড়া খুব একটা পুরুষ নেই সেই গ্রামে। মাঝে মধ্যে দুই একজন
পুরুষের দেখা মিললেও ভয়ে কেউ তেমনটা কথা বলতে চান না বলে খবর পাওয়া গেছে। মিডিয়ার কথা বললে একেবারেই কথা বলতে চায় না কেউ।
এদিকে মামলার ভয়ে বেশির ভাগ পুরুষরা গ্রাম থেকে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে এখানে বাড়িতে থাকা নারী ও শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে গ্রামে
প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখানে ইতোমধ্যে দুই দফা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দফায় চলতি অর্থ বছরের জুনের ১৪ তারিখে এখানে প্রথমবারের মতো সহিংস ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
আর দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার অথ্যাৎ ৭ নভেম্বর সকালের দিকে। এ ঘটনায় এখানে বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ মুহূর্তে এখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আবারো সহিংস ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে বলে গ্রামবাসীরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। কারণ এখনো অনেকে এখানে ভয় ও ভীতি দেখানোর জন্য মাঝে মাঝে গ্রামে প্রবেশ করে বলে শোনা যাচ্ছে।
এ গ্রামের পুরুষরা পালিয়ে থাকার কারণে গ্রামের মানুষেরা চলতি আলু আবাদের মৌসুমে আলু আবাদে যেতে পারছে না বলে খবর পাওয়া গেছে। এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ স্থানীয়ভাবে আলু আবাদের সাথে জড়িত। কৃষির উপর নির্ভরশীল এই এলাকার মানুষেরা।
কিন্তু এখানে চলমান সহিংস ঘটনার জন্য এখানকার মানুষেরা পড়েছে মহা বিপাকে। তারপরে রয়েছে নানা রকমের সমস্যার মধ্যে। এখানকার সহিংস ঘটনায় আলু আবাদের সাথে জড়িত কৃষকরা বর্তমানে পানির দামে আলুর জমি নাটি বা বর্গা লাগাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এখানকার সহিংস ঘটনার সুযোগ নিচ্ছে নাটির সাথে জড়িত আলু চাষিরা।
অনেকে আবার এ গ্রামে যাদের মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন তারা আবারো সহিংস ঘটনার আশংকায় এখান থেকে তাদের মেয়েদেরকে শশুড়বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। সহিংস ঘটনার আশংকায় আবার অনেকেই ভয়েও এ গ্রাম থেকে পাশের গ্রামেও চলে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
নিরপেক্ষ কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকরা যারা সাতে ও পাঁচে থাকেন না তারাও ভয়ে এখান থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলেও অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। সহিংস ঘটনার পরপর এ গ্রামের ওপর দিয়ে চলাচলের বর্তমানে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।
সেখানে বড়ই গাছের কাঁটা দিয়ে বাড়ির ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে এক পক্ষের লোকজন আর এখান দিয়ে চলাচল বর্তমানে করছে না বলে শোনা যাচ্ছে। এদিকে এখানে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের তুলশি পাতার মতো পবিত্র দেখানোর জন্য অনেকেই বলছেন আমি এখানে সহিংস ঘটনার সময়েই ছিলাম না। আমি অন্যত্র ছিলাম।
এদিকে একটি পক্ষের এখানকার বাড়ি ঘর ভাঙ্গচুর দেখে মনে হচ্ছে ঘটনাটি অনেকটাই সাজানো ঘটনা। কারণ হচ্ছে এখানকার ভাঙ্গচুর, হামলার ধরণ ও চাপাটি দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র কপানোর ধরণ একই রকম মনে হচ্ছে।
কারণ কোন ব্যক্তি কোথাও হামলা করলে নিজেও হামলার শিকার হতে পারেন এমন আশংকায় হামলা একই রকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে অনেকেই মনে করছেন।
এখানকার হামলাকারীরা নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তাদের ওপরেও হামলা হয়েছে বলে দাবি করছেন। আসলে প্রকৃত ঘটনা এটি নাও হতে পারে বলে অনেকেই আশংকা করছেন। এখানে একাধিক হামলার নেপথ্যে রয়েছে এলাকায় আধিপত্যে বিস্তার।
এখানকার স্থানীয় সমাজপতিরা অনেক বছর ধরেই অত্র এলাকার মানুষদের বিভিন্নভাবে চালিত করছেন। এ বিষয়টি এ গ্রামের অনেক মানুষই বর্তমানে তাদের মুরব্বীয়ানা মানতে চাচ্ছে না। তাই তারা এ গ্রামের জন্য নতুন মুখ খুঁজ ছিলেন। মামুন হালদার এ গ্রামের সন্তান। সে এই সময়ে এখানকার নিপীরিত অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান।
তাতে আগের নেতৃত্বে থাকা সমাজপতিদের বিরুদ্ধে এখানে একটি পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যান অনেকেই। এর ফলে বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নেননি আগের সমাজপতিরা। আর এ কারণেই এখানে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ৬ নভেম্বর মামুন হালদার ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ শহরস্থ পালকি কমিউনিটি সেন্টারে দাওয়াত খেতে আসেন। সেই সুবাধে তারা গ্রামের বাড়িতে যান একই দিন।
সেখান থেকে তারা পরে আবার ঢাকায় ফিরে যান। কিন্তু এ বিষয়টি এখানকার আগের সমাজপতিরা মেনে নিতে না পারায় তারা ৭ নভেম্বর এখানে সকালের দিকে হামলা করে গ্রামে আতংক সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ হামলা ককটেল বিস্ফোরণে একটি টিনের ঘরের বেড়া একে বাড়েই খুলে যায়। আর এর পাশে একটি নারকেল গাছের ডাবের অংশও ওড়ে যায়।
তাতে প্রতিয়মান হয় যে এখানে বড় ধরণের ককটেল চার্জ করা হয়ে ছিল। যেখানে এ ককটেলটি চার্জ করা হয় সেখানকার পূর্ব দিকের ঘরে ছিল সাতদিনের একটি শিশু বাচ্চা। ককটেলের এ শব্দে দুষনে এ শিশু বাচ্চাটি আক্রান্ত হয় বলে শোনা যাচ্ছে। শাহজালাল নামে এক যুবক এখানে আগের সমাজপতিদের পক্ষে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সে বর্তমানে এলাকা অবস্থান করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিরিহ মানুষদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে আরো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনার পরপরই সেখানে যায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। এদিকে ১৪ জুনের ঘটনা এখানকার একটি পরিবারের ছোট্ট শিশু তার মালোশিয়া প্রবাসী বাবাকে এখানকার হামলার দৃশ্য দেখালে সেই বাবা তখনই হার্ট স্টোকে মারা যান বলে এখানকার গ্রামবাসীরা জানিয়েছে।
পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎসের ব্যক্তিটি মারা যাওয়ায় চারটি শিশু সন্তান নিয়ে বর্তমানে সেই পরিবারটি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখানকার এলাকাবাসী এ বিষয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।