সেতু ইসলাম: কংক্রিট আর স্টিলের নিখুত গাথুনিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম এই নান্দনিক পদ্মাসেতু। এরই মধ্যে দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে স্টিলের তৈরী স্প্যানের উপর কংক্রিটিংয়ের কাজ। ইতমধ্যে ২৮টি স্প্যান বসে সোয়া ৪ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। এসব স্প্যানের উপর এখন কংক্রিটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাতংক তবুও দ্রুত এগিয়ে চলছে পদ্মাসেতুর কাজ।
সারা বিশ্ব যেখানে করোনা নামের ভাইরাসের আক্রমনে দিশেহারা আর ঠিক সেই সমায়েও করোনাতংকে হার মানিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে বিশে^র অন্যতম নান্দনিক দ্বিতল বিশিষ্ট দেশবাসির স্বপ্নের পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন। সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে সবকটি পিলারের কাজ শেষে পিলারের উপর যেসব স্প্যান বসানো হয়েছে সেথায় কংক্রিটিং শুরু হয়েছে। এতে করে সেতুর বাস্তব রুপ দেখা দিতে শুরু করেছে।
পিলারের উপর স্প্যান এর উপরে কংক্রিটিং এই কংক্রিটের উপর দিয়েইে যানবাহন চলাচল করবে। সম্পূর্ণ স্বাস্থ বিধি মেনেই এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পিপিই ব্যবহার করে এখানে কর্মরতরা দিন-রাত্র শিডিউল মাফিক কাজ করে চলেছেন। এখানকার কর্মরতরা তাদের দেহকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক,হেলমেট,সেফটি ভেষ্ট, ইয়ার প্লাগ, হ্যান্ড গ্লাফস, স্টিল টো জুতা, গামবুট ইত্যাদি ব্যবহার করছেন।
দেশের দক্ষিন দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের বিপুল জনগনের অধীর আগ্রহের অবসান ঘটিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের পদ্মা সেতু এখন সোয়া ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমান বাস্তবতায়। ইতিমধ্যে ৪২টি পিলারের সবক’টির কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। ১৫০ মিটারের ৪১টি স্প্যান যার মধ্যে ২৮টি স্প্যান পিলারে উঠে ৪ হাজার ২০০মিটার দৃশ্যমান হয়েছে বাকী গুলি পিলারে উঠার অপেক্ষায়।
৩৯টি স্প্যান প্রকল্প এলাকায় যার ২৮টি পিলারে উঠেছে এবং ১১টি মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশান ইয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে পিলারে বসারে অপেক্ষায়। আর বাকী ২টি স্প্যান ইতিমধ্যে চীন থেকে আনা হচ্ছে। ২০২১ সালের শেষের দিকে একই সাথে এই সেতু দিয়ে পার হবে সড়ক পরিবহন ও রেল। এমন প্রত্যাশা নিয়ে শত শত শ্রমিক আর প্রকৌশলীর অক্লান্ত পরিশ্রমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে সেতুর মূল নির্মাণ কাজ।
বিশাল নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে মুলসেতুর ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়নের কাজ শেষ করেছে। কংক্রিট আর স্টিলের নিখুত গাথুনিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম এই নান্দনিক সেতুটি। এরই মধ্যে এক দিকে শেষ হয়েছে এপ্রোজ সড়ক নির্মাণ কাজ, উভয় পাড়ে দেশের প্রথম প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ের কাজ, টোল প্লাজা, পুরোদমে নদী শাসনের কাজসহ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সেতুর নীচ তলায় রেল পথের কাজ।
৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতুটি নির্মিত হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজেস্ব অর্থায়নে। এই সেতুতে ৪২ পিলার ছাড়াও দুই পাড়ে আরো ১২টি করে আরো ২৪টি পিলার করা হয়েছে। সর্বমোট ৬৬টি পিলার বসানো হয়েছে এই পদ্মাসেতুতে। দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
ডাঙার অংশ অর্থাৎ সংযোগ সেতু ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ই¯পাতের যে স্প্যান বসানো হয়েছে এর ভিতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। সম্পুর্ন নিজেস্ব অর্থায়নে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর দুপুর ১টার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে মূল কাজের শুভসূচনার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়ে আজ তা দৃশ্যমান বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে।
পদ্মাসেতুর বিশাল এই কর্মযজ্ঞ রাতের আধারকেও হার মানায়। কর্মমূখর পদ্মায় করোনার মতো ভাইরাসকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্লা দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে সেতু নির্মাণ কাজ। মূল সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, বর্তমানে করোনাতংকের মাঝেও আমাদের অভিজ্ঞ টিম সব রকমের স্বাস্থ বিধি মেনে চলছ্ েআমি একজন প্রকৌশলী আমার পিপিই হলো আমার ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইপমেন্ট।
তিনি আরো বলেন,বর্তমানে বহুল আলোচিত শব্দ হলো পাসোন্যাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এই পিপিই’র বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। যেহেতু আমরা প্রকৌশলী আমি নিজেই পেশায় একজন প্রকৌশলী তাই কর্মক্ষেত্রে আমারও পিপিই ব্যবহার করতে হয়। আমাদের পিপিই হলো ইঞ্জিনিয়ারিং পিপিই।
যেমন আমার মাস্ক, হেলমেট সেফটি ভেস্ট, ইয়ার প্লাগ, হ্যান্ড গ্লাভস, ষ্টিল টো জুতা, গাম বুট ইত্যাদি। তিনি বলেন সেফটি ভেষ্ট পরা থাকলে দিন রাত্র নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়। ইয়ার গ্লাভস শব্দ থেকে রক্ষা করে। হ্যান্ড গ্লাভস হাতকে সুরক্ষা করে এবং হেলমেট ও মাস্ক নাখ-মুখ ও মাথাকে সু-রক্ষা করে।
এখানে সবাই স্বাস্থ সচেতন থেকে আমরা যে যার কাজ করেছি। দেশের সর্ব বৃহৎ প্রকল্প পদ্মাসেতু প্রকল্পের ৪২টি পিলারের সবকটির কাজ অত্যান্ত সফলতার সাথে শেষ করতে পেরেছি। এখন চলছে কংক্রিটিংয়ের কাজ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন ) শরিফুল ইসলাম জনান, এ প্রকল্পে মাওয়া প্রান্তে প্রায় ২কি.মি. ও জাজিরা প্রান্তে প্রায় ১২ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ চলছে।
এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড মাওয়া প্রান্তে আরো ৪ থেকে ৬ কিমি. নদী শাসনের কাজ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগ্রেড সেতু কাজের তদারকী করছেন। অত্যান্ত সুন্দরভারে এবং তড়িৎ গতিতে শেষ হয়েছে ফোরলেন সড়কের কাজ চলছে রেল লাইন প্রকল্প’র বাস্তবায়ন কাজ।
স্প্যানের উপরে পাত বসানো স্প্যানের মাঝে রেল লাইনের কাজও চলছে। আগামি বছরই সবকিছু ঠিক থাকলে আগামি বছরের শেষের দিকে চালু হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে শুরু হবে বাংলার নতুন দিগন্ত।