
আগামী ডিসেম্বরের ১০ তারিখে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে নৌকা প্রতীকের আশায় নমিনেশন ফরম জমা দিয়েছিলেন আল ফেরদাউস আলফা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক তিনি পাননি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে হাল ছাড়েননি আলফা। দলীয় প্রতীক না পেলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত আল ফেরদাউস আলফাকে নির্বাচনী ময়দানে প্রকাশ্যে নামতে হবে। কেননা গরীব অসহায় মানুষের পাশে থাকা আলফা সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর সম্মানীর টাকাও তিনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। সম্মানীর সমুদয় টাকা বিলিয়ে দেন অসহায়দের মাঝে।
সূত্র জানায়, দুস্থ, গৃহহারা, অসহায় মানুষের কাছে আল ফেরদাউস আলফা দয়ালু, দানবীর ও মানবিক হৃদয়ের মানুষ বলে পরিচিত। নি:স্বার্থভাবে গরীবের সেবা করতে গিয়ে বার বার প্রতিপক্ষের আক্রমনের শিকার হয়েছেন তিনি। এমনকি জেল-জুলুমের শিকারও হয়েছেন এই আলফা।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত সম্মানীর সম্পূর্ণ টাকাই তিনি প্রতিমাসে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণে ব্যয় করেন। নিজের ব্যবসায়ের উপার্জিত অর্থেরও একটা অংশ তিনি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কর্মকান্ডে রয়েছে তার হাতের ছোঁয়া। সেই আল ফেরদাউস আলফা দেবহাটা
উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনায় পক্ষে বিপক্ষে শুরু হয়েছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচনী ময়দানে তাকে দেখা যাবে এমন খবরেও অনেকের প্রেসার ওঠা-নামা শুরু হয়েছে।
প্রতিপক্ষরা তাকে বার বার চোরাকারবারী বানানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টিকেনি। যতবারই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। জনতার ভালোবাসা তাকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়েছে। এমনটি দাবি করেন তার এলাকার মানুষ।
উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আল ফেরদাউস আলফার সাথে কথা হয় এই প্রতিনিধির। আলফা বলেন, আমি বৈধভাবে আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসা করি। আমার দুই ছেলেও আমার সাথে ব্যবসা করে। প্রতি বছর আমরা সরকারকে কোটি টাকার ট্যাক্স প্রদান করছি।
গত ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর জেলার সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে আমি অথবা আমার দুই ছেলে নির্বাচিত হয়ে আসছি। জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা এখন আমি ও আমার দুই ছেলে।
আলফা বলেন, আমাকে কেউ কেউ চোরাকারবারী বানানোর চেষ্টা করেন। সেইসব ব্যক্তিদের কাছে আমার প্রশ্ন আমি ও আমার দুই ছেলে প্রতি বছর কোটি টাকার ট্যাক্স দেই। এই বিপুল পরিমান ট্যাক্স দিয়ে কেন আমি অবৈধ ব্যবসা করতে যাবো।
তিনি বলেন, অবৈধ কারবার বা চোরাচালানের জন্য সরকারকে ট্যাক্স দেওয়ার দরকার হয় না। আর সাতক্ষীরার মতো জায়গায় থেকে যে ব্যক্তি প্রতি বছর সরকারকে সর্বোচ্চ ট্যাক্স প্রদান করে কর বিভাগের শীর্ষ সম্মানের পাত্র হয়েছেন তার বিরুদ্ধে এ ধরণের প্রচারণা বা ষড়যন্ত্র কোন সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে না।
আলফা বলেন, সাতক্ষীরা ও দেবহাটা সীমান্ত থেকে কোন মালামাল উদ্ধার হলেও এক ধরণের সংবাদপত্র আমার নাম জুড়ে দিয়ে খবর প্রকাশ করে। হাজার টাকার বিড়ি আটকের খবরেও আমার নাম, লাখ টাকার মাদক আটকের খবরেও আমি।
আবার কোটি কোটি টাকার কোন মালামাল আটক হলেও খবরে আমার নাম জুড়ে দেওয়া হয়। যদিও এসব কোন ঘটনার সাথে আমার নূন্যতম কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি বিভিন্ন সময়ে যারা গ্রেপ্তার হন তাদের সাথেও আমার কোন সম্পর্ক নেই। তারপরও পরিকল্পিতভাবে আমার নাম জুড়ে দেওয়া হয় চোরাচালান সংক্রান্ত রিপোর্টে। এটা ভয়ংকর তথ্য সন্ত্রাস।
আলফা বলেন, কয়েক মাস আগে ভারত থেকে বৈধভাবে আমার আমদানী করা এক ট্রাক মাছ আটক করলো বিজিবি। আমার নাম উল্লেখ করে মামলা না হলেও ঐ রাতেই আমাকে গ্রেপ্তার করানো হলো। শুধু তাই নয়, পুলিশকে টাকা অফার করা হলো আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার জন্য। কিন্তু আমার ঐ আমদানী করা মালামালের মধ্যে কোন অবৈধ মালামাল ছিল তা কিন্তু প্রমানিত হয়নি। নিছক আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং ভোমরা স্থল বন্দর বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি অশুভ চক্র এই ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরী করে।
আলফা বলেন, সাহেদ ধরা পড়লো শাখরা ব্রিজের নিচ থেকে। কয়েকজন সাংবাদিক লিখলেন ৫০ লাখ টাকার চুক্তিতে আমি নাকি তাকে ভারতে পার করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমার সম্পর্কে বিশাল মিথ্যা ফিরিস্তি তৈরী করে একটি ফাইল পাঠানো হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। আবার ঢাকার দু’একজন সাংবাদিক সাহেদকে বাদ দিয়ে শুরু করলেন আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচারণা। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এইসব হাস্যকর প্রচারণাও চালানো হয়েছে। যা শুধু সাতক্ষীরার মানুষ নয়, সারা দেশের মানুষ অবগত আছে।
আলফা বলেন, আমি গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করি এবং জেলা পরিষদের ২০টি সদস্য আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই। জেলা পরিষদের সদস্য থাকার এই সময়ে আমার এলাকায় জেলা পরিষদের বরাদ্দের প্রতিটি অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়েছে। আমার মাসিক সম্মানীর সম্পূর্ণ টাকা প্রতি মাসে
অসহায় গৃহহীন মানুষের গৃহ নির্মাণে ব্যয় করেছি। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের উপার্জনের টাকারও একটি অংশ এলাকার মানুষের কল্যাণে ব্যয় করে চলেছি। আমি জেলা পরিষদ সদস্য থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষের জন্য আরো বেশি কাজ করতে পারবো এই ধারণা থেকে এলাকার সাধারণ মানুষই আমাকে ভোটে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে চলেছেন। তাই আমি দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছিলাম।
মিডিয়ায় বিরূপ প্রচারণা সম্পর্কে আল ফেরদাউস আলফা বলেন, ‘এলাকার যে সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব তিনি আমার বিরুদ্ধে খবর ছাপানোর পরক্ষণে তার মেয়ের লেখাপড়া বা অন্য কোন কারণ দেখিয়ে খরচের জন্য আমার কাছে যান। বহু বছর গেছেন। আমি কখনো তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনি।’ কারণ ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার বিষয়। এটা আমার একটা বড় দুর্বলতা। সম্ভবত সেই সাংবাদিক অন্যান্য সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আমার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করেন। তাছাড়া সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের একটি ত্রি-তল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে আমি সেখানে একদিন ছাদ ঢালাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের আভ্যন্তরীন বিরোধের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাকে একটি পক্ষভূক্ত করা হয় এবং আমি একটি পক্ষকে বা ব্যক্তি বিশেষকে অর্থ সহায়তা প্রদান করি এমন অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। যা সবার জন্যই বিব্রতকর।
আলফা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমি কোন ধরণের অবৈধ ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত নই। যেটা আমার নির্বাচনী এলাকা দেবহাটা উপজেলার যেকোন গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে শুনলে জানা যাবে। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অতি সাধারণ একজন সৈনিক হিসেবে এলাকার সাধারণ মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচিত হতে পারলে ব্যাপকভাবে সেবা করার সুযোগ পাবো। তিনি সকলের দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেন।