মোহাম্মদ সেলিম, তোফাজ্জ্বল হোসেন ও সালমান হাসান:
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারী ও অবহেলার কারণে এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের জাতীয় কর্মসূচির আওতায় হাম রুবেলার টিকা সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া এখানে প্রতিদিনের নির্ধারিত ডাক্তাররা তাদের নিজ কক্ষে যথা সময়ে না থাকায় আগত রোগিদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে নারী ও শিশু রোগীরা।
এ সকল বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এর দায়িত্বে থাকা টিএসকে তার চেয়ারা পাওয়া যায়নি দুপুর ১২টার দিকে। এদিন তিনি এখানে অফিস করেছিন কিনা সেই বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। প্রশাসনিক অফিস কক্ষে গিয়ে তার মোবাইল নাম্বার চাইলেও তাও দেয়া হয়নি। সব কিছু মিলিয়ে এখানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।
সরোজমিনে গতকাল রবিবার টঙ্গীবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ প্রতিবেদকসহ একাধিক মিডিয়াকর্মী সকাল ১০টায় সেখানে উপস্থিত হয়ে এ ধরণের দৃশ্যে দেখতে পান। এখানে পৌঁছতে এ ভবনের প্রবেশ মুখে সর্ব প্রথম চোখে পড়ে ইপিআইয়ের হলুদ ব্যানার। আর সেখানে রয়েছে হাম রুবেলাসহ অন্যান্য টিকার সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু এ কাজের যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি চেয়ারে নেই। কিছুক্ষণ বিষয়টি দেখার চেষ্ঠা করা হলো। সেখানে আগত নারী ও শিশুরা আসলে একজন মধ্য বয়সের লোক বলে যাচ্ছেন এখানে এখন কোন টিকা দেয়া হবে না। আপনারা পাশ্ববর্তি সেন্টারে চলে যান। কেউ এ কথা শুনছে।
আবার কেউ এখানেই থেকে যাচ্ছেন। এ বিষয়টি খোঁজ নেয়ার চেষ্ঠা করা হলে টিএস ডা: তাসলিমা ইসলাম পিয়ন জানান, এ কাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ব্যাংকে গেছেন। এরমধ্যে এ প্রতিবেদকের দলটি চলে যান, জরুরী বিভাগে। সেখানে গত ২ তারিখে পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মারামারির রোগি কত নাম্বার ওয়ার্ডে আছেন তার খোঁজ নেন। জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত একজন খাতাপত্র চেক করে বললেন এই রোগি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেই রোগি এখানেই কেবিনে ভর্তি আছেন। এইভাবে এখানে সঠিক তথ্য প্রদানে হয়রানি করা হয়ে থাকে লোকজনকে। এভাবেই এখানে সময় পার হয়ে যায় প্রায় ২ ঘন্টা। ফেরার পথে দেখা যায় টিকা দেয়ার লোক এখনো এখানে আসেনি।
এ বিষয়টি জানার জন্য টিএসএর রোমে গেলে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তবে তার রোমে একজন মহিলা ব্যক্তি বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় টিএসএ’র পিয়নকে জিজ্ঞেস করলে সেও কিছু তার সর্ম্পকে জানাতে চায়নি। এ বিষয়টি সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদকে জানালে, তিনি এ বিষয়টি দেখছেন বলে জানান। এর পরপরই সেখানে একজন স্বাস্থ্য কর্মী ছুটে এসে টিকা দেয়া শুরু করেন।
এর আগে স্বাস্থ্য কর্মীর সিটে হাসপাতালের এক ইয়াং কালো রংয়ের কর্মচারীকে বসে থাকতে দেখা যায়। সে জানায় ম্যাডাম টয়লেটে গিয়ে ছিলেন। তাই তার আসতে ২ ঘন্টা দেরি হয়েছে। অন্যদিকে এখানে অনেক সময়ে এ ধরণের টিকা মজিবর নামের ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ব্যক্তিটি এ ধরণের টিকা দেয়ার কোন ধরণের ট্রেনিং নেই বলে শোনা যাচ্ছে। এ সব ঘটনায় এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এদিকে এই হাসপাতালের একাধিক রুমে ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে রোগিরা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নারী ও শিশু রোগিরা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন। যে হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেই মুলত খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে এমনটি হবে, তা স্বাভাবিক বলে অনেকেই মনে করেন।