
প্রাচীনকাল থেকে দেশের প্রত্তন্ত শহুরে মানুষের নিত্য দিনের সাংসারিক কাজে ব্যবহার হতো মাটির তৈরি পণ্য। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার। মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহারের চাইতে আধুনিক জিনিসপত্রের ব্যাবহার সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার ভূলে মানুষ প্লাষ্টিক ও মেলামাইনসহ বিভিন্ন ধাতব দ্বারা তৈরি পণ্য ব্যাবহারে ঝুঁকে পরেছেন।
তবে আধুনিক যুগে থেকেও কিছু সংখ্যক মানুষ এখনো মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ভুলে যাননি। এখনো গ্রামাঞ্চলের বৃদ্ধ মানুষরা মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
মাটির তৈরি জিনিসের তেমন কদর না থাকলেও মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ও বংশ পরমপরা ধরে রেখেছেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার শতাধিক পরিবার। এর মধ্যে উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের চোরমর্দ্দন ও দানিয়াপাড়া গ্রামের ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার উল্লেখযোগ্য।
এ দুই গ্রামের মৃৎ শিল্পিদের স্থানীয় ভাষায় বল হয় কুমার। আর এ কুমাররা হিন্দু ধর্মালম্বি পাল বংশের লোক। তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা মাটি দিয়ে কলস, টালি, মটকা, হাঁড়ি, পাতিল, বদনাসহ নানা তৈজসপত্র তৈরি করা। কুমার বা পালরা বংশ পরমপরায় এ কাজ করে আসছেন। এ দুই গ্রামের মৃৎশিল্পিরা তাদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাটির কাজ করে এখনো টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
কিন্ত মাটির তৈরি পণ্যের ক্রেতা এবং ন্যায্য মূল্যায়ন না থাকায় ধীরে ধীরে মৃৎ শিল্পিরা এ পেশা থেকে অন্য পেশায় ঝুকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেকে ছেড়েও দিয়েছেন এ পেশা। এতে করে হারাতে শুরু করেছে প্রাচীন সভ্যতা। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে কুমারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৃত শিল্পিরা ৩-৪ বছর পূর্বে মাটি দিয়ে ১০-১৫ ধরনের পন্য তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন।
এছাড়া সেসব পণ্য পাইকারী হিসেবেও অনেক পাইকাররা বাড়ীতে এসে কিনে নিয়ে বাজারে খুচড়া দামে বিক্রি করতেন। তবে বর্তমানে শুধু দইয়ের পাতিল বানাচ্ছেন তারা। করোনার লকডাউন চলাকালীন সময় চাহিদা অনুযায়ী যেসব পাতিল বানানো হয়েছে সেগুলোর বেশীর ভাগই বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।